‘পিস অ্যাম্বাসাডার’দের দ্বিতীয় সম্মেলন: সহিংসতামুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক

pসন্ত্রাস-সহিংসতামুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হলো পিস অ্যাম্বাসেডরদের দ্বিতীয় জাতীয় কনভেনশন। ১৫ নভেম্বর ২০১৬, ঢাকাস্থ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এই কনভেনশনটি অনুষ্ঠিত হয়। কনভেশনের উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা জনাব সুলতানা কামাল। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলো’র যুগ্ম সম্পাদক জনাব সোহরাব হাসান, ডিএফআইডি’র বাংলাদেশ প্রধান জেন এডমন্ডসন, ইউএসএইড-এর মিশন ডিরেক্টর জেনিনা জারুজেলস্কি এবং আইএফইএস-এর চিফ অব পার্টি সিলিয়া প্যাসিলিনা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. বদিউল আলম মজুমদার।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে জনাব সুলতানা কামাল বলেন, ‘আমরা যদি দলগত ও সম্প্রদায়গত পরিচয়ের উর্দ্ধে উঠে জাতিগত পরিচয়ে বড় হতে পারি তাহলে সমাজ ও রাষ্ট্রে সম্প্রীতি গড়ে উঠবে।’ তিনি বলেন, ‘অন্য কেউ এসে আমাদেরকে শান্তির বাণী শোনাবে কেন? আমরা কি একে অপরের বন্ধু হতে পারি না? ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে আমরা কেমন দেখতে চাই তা নিয়ে ভাবতে হবে। নিজের পরিচয়কে বড় করে দেখতে হবে। রাজনীতি করতে হবে সমাজের মানুষের কল্যাণের জন্য। সমাজের মানুষের অধিকার আদায়ে সোচ্চার হতে হবে। তাহলেই আমরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারবো।’

জনাব সোহরাব হাসান বলেন, ‘আমরা যদি অপরের মতামতকে শ্রদ্ধা করতে পারি এবং অপরের মতামত প্রকাশ করার অধিকার নিশ্চিত করতে পারি তাহলে একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়ে তুলতে পারবো।’ তিনি বলেন, আমাদের পরিবার ও সমাজে বিভিন্ন ধরনের দ্বন্দ্ব ও সহিংসতা বিরাজমান। সুতরাং সামাজিক সম্প্রীতি গড়ে তোলাটা কিছুটা হলেও কষ্টকর। এজন্য সমাজে শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিতে হবে। শুধুমাত্র বলপ্রয়োগ করেই সহিংসতা দূর করা যাবে না। খারাপ আদর্শের বিপরীতে উন্নত আদর্শ দিয়ে মানুষের মন জয় করতে হবে।’

অনুষ্ঠানের সভাপতি ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ শান্তিপূর্ণ থাকলেও বর্তমানে সহিংসতা বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে নির্বাচনী সহিংসতা বেড়েই চলেছে। তাই শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘অনেকে সমাজে বিদ্যমান বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে নিয়ন্ত্রিত বিশৃঙ্খলা দরকার বলে মনে করেন। কিন্তুু আমি মনে করি, এটি শান্তিপূর্ণ পথ নয়। কারণ আমরা সহিংসতার বদলে সহিংসতা চাই না, আমরা চাই শান্তিপূর্ণ পরিবেশ।’ উপস্থিত পিস অ্যাম্বাসেডরদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনারা সমাজের গুরুত্বপূর্ণ নেতা। আপনারা বাংলাদেশকে শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ রাখার জন্য সক্রিয় রয়েছেন। এজন্য আপনাদের অভিনন্দন জানাই।’

জেন এডমন্ডসন বলেন, ‘গণতন্ত্র ও দারিদ্র্য দূরীকরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ তার অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখে চলেছে। এই যাত্রার সাথে অংশীদার হতে পেরে যুক্তরাজ্য সরকার গর্বিত। সরকারের এই লক্ষ্যগুলো অর্জনে আপনারা পিস অ্যাম্বাসেডরগণ যে শ্রম ও সাহসিকতার পরিচয় দিচ্ছেন এজন্য আপনাদের ধন্যবাদ জানাই।’

জেনিনা জারুজেলস্কি বলেন, ‘আমরা যদি অন্যের মতামতকে শ্রদ্ধা করতে পারি এবং আমরা যদি আন্তরিকভাবে অন্যের কথা শুনতে পারি তাহলে আমাদের মধ্যে সম্প্রীতির ভাব গড়ে উঠবে। পার¯পরিক মেলামেশার মাধ্যমে আমরা একে অন্যের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতেও পারবো।’

কনভেনশনের শুরুতে ‘নির্বাচনী সহিংসতার বিরুদ্ধে জনগণ’ শীর্ষক প্রকল্পের ম্যানেজার সৈকত শুভ্র আইচ মনন বিগত সময়ে প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ অর্জন ও চ্যালেঞ্জসমূহ তুলে ধরেন।

দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত এ কনভেনশনে ২৯টি জেলার ৪৮টি উপজেলার প্রতিনিধি হিসেবে প্রায় ২০০ জন ‘পিস অ্যাম্বাসাডার’ তাদের নিজ এলাকায় সন্ত্রাস-সহিংসতা দূর করা ও সামাজিক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় যে অনন্য/সফল ভূমিকা পালন করেছেন তা তুলে ধরেন।

প্রসঙ্গত, সহিংসতা প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে ৪৮টি এলাকায় সকল রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের অংশগ্রহণে ‘নির্বাচনী সহিংসতার বিরুদ্ধে জনগণ’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে দি হাঙ্গার প্রজেক্ট। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবর্গ ও জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করে এই প্রকল্প রাজনৈতিক ও নির্বাচনী সহিংসতা নিরসনে যে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করেছে, তা স্থানীয় পর্যায়ে যথেষ্ট ইতিবাচক সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়। বেশ কয়েকটি উপজেলায় সকল রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ নিজ নিজ এলাকায় শান্তি-সম্প্রীতির লক্ষ্যে একটি আচরণবিধিতেও স্বাক্ষর করেন। এই ধারা অব্যাহত রাখতে পারলে একটি সুস্থ ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। এই কাজকে আরও বেগবান করার লক্ষ্যেই পিস অ্যাম্বাসেডরদের ‘দ্বিতীয় জাতীয় কনভেশন’ অনুষ্ঠিত হয়।