দারিদ্র্যকে জয় করলেন অদম্য রোজিনা আক্তার

মাত্র ১৭ বছর বয়সে বিয়ে হয়ে যায় কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার মানিকপুর ইউনিয়নের রোজিনা আক্তার-এর। বিয়ের পর যৌতুকের জন্য স্বামীর পরিবার থেকে তাকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করা হত। বিয়ের কিছুদিন পর রোজিনাকে পাঠিয়ে দেয়া হয় তার বাবার বাড়িতে। বাবার বাড়িতে এসে স্বামীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন তিনি। মামলার খবর পেয়ে তার স্বামী দুবাই চলে যায়। রোজিনা আক্তারকে আইনি সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা দেন নারীনেত্রী শাহানা বেগম। শাহানা বেগম রোজিনাকে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার জন্য উৎসাহ যোগান।

২০১৪ সালে দি হাঙ্গার প্রজেক্ট আয়োজিত একটি সেলাই প্রশিক্ষণে অংশ নেন রোজিনা। প্রশিক্ষণের পর কাপড় সেলাই করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেন তিনি। বর্তমানে কাপড় সেলাইয়ের পাশাপাশি তিনি একটি বিদ্যালয়ে চাকরি করেন। আর এর মাধ্যমে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন রোজিনা। রোজিনা এখন সম্মান ও মর্যাদা নিয়েই বসবাস করছেন। তিনি দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে একটি মডেল হয়ে ওঠেছেন তার সমাজে।

রোজিনা আক্তার ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে ‘নারী নেতৃত্ব বিকাশ’ শীর্ষক বুনিয়াদি প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণটি তার মনোবল বৃদ্ধি করে এবং দরিদ্রতা দূরীকরণ ও নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে কাজ করতে তাকে সাহস যোগায়।
প্রশিক্ষণের পর থেকে তিনি সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কন্যাশিশুদের শিক্ষা, নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা, বাল্যবিবাহ ও যৌতুক প্রথা বন্ধ, মা ও শিশুর পুষ্টি বিষয়ক উঠান বৈঠক ও আলোচনা সভা পরিচালনা করে থাকেন। যেখানে কোনো বাল্যবিবাহ সংঘঠিত হয় সেখানে ছুটে যান রোজিনা। প্রথমে অভিভাবকদের বাল্যবিবাহের কুফল বোঝানোর চেষ্টা করেন। এতে বিয়ে বন্ধ না করা গেলে তিনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সচেতন নারী-পুরুষদের নিয়ে তা প্রতিরোধ করেন।

রোজিনা মনে করেন, নারীরা সংগঠিত হলে অনেক সমস্যার সমাধান করা যায়। এমন চিন্তা থেকে তিনি ২৬ জন দরিদ্র নারীকে নিয়ে তার গ্রামে একটি নারী উন্নয়ন সংগঠন গড়ে তুলেছেন। এই সংগঠনের মাধ্যমে সদস্যদের বিভিন্ন দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অনেক নারীই এখন স্বাবলম্বী বলে জানান রোজিনা।

সমাজ উন্নয়নমূলক কাজে রোজিনার আগ্রহ দেখে তাকে অনেকেই রাজনীতি করার জন্য উৎসাহ যোগান। কিন্তু নারীনেত্রী রোজিনা আক্তারের নেতা হওয়ার ইচ্ছে নেই। তিনি নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ এবং সমাজ থেকে হিংসা-বিদ্ধেষ দূর করার জন্য কাজ করে যেতে চান।