গৃহিণী থেকে কৃষাণী, শেপালী এখন স্বাবলম্বী

তিনি ছিলেন সাধারণ একজন গৃহিণী। বর্তমানে পুরোদুস্তর কৃষাণী। নিজ প্রচেষ্টায় দারিদ্র্যকে পেছনে ফেলে তিনি এখন স্বাবলম্বী। বলছি শেপালী নাটোর জেলার গুরুদাসপুর উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নের বাসিন্দা নারীনেত্রী শেপালীর কথা।

১৬ বছর বয়সে তার বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের এক বছর পর এক পুত্র সন্তানের জননী হন তিনি। এক পর্যায়ে স্বামীর নানা রকম অত্যাচার সইতে না পেরে বাবার বাড়িতে চলে আসেন তিনি। কিছুদিন ঢাকায় গিয়ে পোশাক কারখানায় কাজ করেন। এরপর বাড়িতে ফিরে দেখেন সেই পুরানো দারিদ্র্য। কিন্তু হাল ছেড়ে দেননি তিনি।

২০১২ সালে ঝাউপাড়া গ্রামের সাঈদের মাধ্যমে শেপালী দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে পারেন। সে বছরই ‘নারী নেতৃত্ব বিকাশ’ শীর্ষক বুনিয়াদি প্রশিক্ষণে (৯১তম ব্যাচ) অংশগ্রহণ করেন তিনি। প্রশিক্ষণটি তার জানার পরিধি বাড়ানোর পাশাপাশি তাকে উদ্দীপ্ত করে তোলে। প্রশিক্ষণের পর তিনি নানামুখী অর্থনৈতিক কার্যক্রমে নিজেকে যুক্ত করেন। বাড়িতে হাঁস-মুরগি, গরু ও কবুতর পালন করা শুরু করেন। বর্তমানে তার ২৮টি হাঁস, ৩০টি কবুতর, মুরগি, ৩টি ছাগল ও একটি গরু আছে। এর পাশাপাশি জমি বর্গা নিয়ে নিয়ে বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করা শুরু করেন। শেপালী বর্তমানে দুই বিঘা জমি বন্ধক নিয়ে রসুন চাষ করেছেন। ফলনও হয়েছে খুব ভাল। এসব কাজের মধ্য দিয়ে নিজ পরিবারে স্বচ্ছলতা নিয়ে এসেছেন শেপালী।

আগে ছিল ছনের ঘর, তারপর টিনের ঘর করেছেন, আর এখন ইটের ঘর নির্মাণ করেছেন শেপালী।

শেপালী জানান, এখন তিনি সবার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলতে পারেন। বলেন, ‘দি হাঙ্গার প্রজেক্ট আমাকে টাকা দেয়নি, কিন্তু আমাকে যে জ্ঞান দিয়েছে তা কাজে লাগিয়ে আমি এখন সাবলম্বী।’

একজন নারীনেত্রী হিসেবে এলাকার মানুষের উন্নয়নেও কাজ করছেন তিনি। শেপালী বর্তমানে স্যানিটেশন, শিক্ষা, গর্ভবতী মায়ের সেবা, বাল্যবিবাহ বন্ধ করা ও অন্যান্য নারীদের আয় বৃদ্ধিমূলক কাজের সাথে যুক্ত করা ইত্যাদি বিষয়ে কাজ করছেন। ১২ জন শিশুকে বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়েছেন। নারীনেত্রীদের প্রচারণার ফলে এলাকার শ্বাশুড়িরা এখন তাদের গর্ভবতী পুত্রবধূদের আগের তুলনায় বেশি যত্ন নেন বলে জানান শেপালী। শেপালী পাঁচজন অসহায় নারীকে আয় বৃদ্ধিমূলক কাজের সাথে যুক্ত করিয়েছেন। এলাকার অন্য নারীরা শেপালীকে দেখে এখন অনুপ্রেরণা খুঁজে পান।

সদা হাস্যোজ্জল শেপালী মনে করেন, ‘ছেলেরা যদি কর্ম করতে পারে, তবে মেয়েরাও পারবে। এজন্য দরকার ইচ্ছাশক্তি।’

সংকলনে: মাকসুদা খানম, প্রোগ্রাম অফিসার, দি হাঙ্গার প্রজেক্ট।