ইয়ুথ এন্ডিং হাঙ্গার-বাংলাদেশ-এর উদ্যোগে সপ্তদশ জাতীয় যুব সম্মেলন অনুষ্ঠিত

০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে ইয়ুথ এন্ডিং হাঙ্গার-বাংলাদেশ-এর উদ্যোগে সপ্তদশ জাতীয় যুব সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এলজিডি অডিটোরিয়ামে (আগাঁরগাও, ঢাকা) অনুষ্ঠিত উক্ত সম্মেলনে সারাদেশ থেকে এক হাজারের বেশি স্বেচ্ছাব্রতী তরুণ-তরুণী অংশগ্রহণ করেন। প্রসঙ্গত, আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাব্রতী সংস্থা দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর অনুপ্রেরণায় সৃষ্ট ইয়ুথ এন্ডিং হাঙ্গার ছাত্র-তরুণদের একটি সংগঠন। সংগঠনটি ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠার ২৫ বছর পার করেছে, প্রশিক্ষণ দিয়েছে লক্ষাধিক তরুণ-তরুণীকে। প্রশিক্ষিত এই তরুণরা তৃণমূলে নানা সামাজিক উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছেন।

অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী পর্বে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব ডেরিক ব্রাউন, মিশন ডিরেক্টর, ইউএসএইড, বাংলাদেশ; জনাব সুদীপ্ত মুখার্জি, কান্ট্রি ডিরেক্টর, ইউএনডিপি বাংলাদেশ; ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, সম্মানিত ফেলো, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি); জনাব আসিফ সালেহ, নির্বাহী পরিচালক, র্ব্যাক; ড. বদিউল আলম মজুমদার- গ্লোবাল ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কান্ট্রি ডিরেক্টর, দি হাঙ্গার প্রজেক্ট; এবং জনাব শাহনাজ করিম, ডিরেক্টর, সোসাইটি, ব্রিটিশ কাউন্সিল।

জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। স্বাগত বক্তব্য দেন সম্মেলনের আহবায়ক ইয়ুথ লিডার মারুফুজ্জামান অসিন এবং ইযুথ এন্ডিং হাঙ্গার-এর ন্যাশনাল কো-অর্ডিনেটর মোস্তাফিজুর রহমান সজল।

অনুষ্ঠানে ডেরিক ব্রাউন বলেন, তরুণরা পরিবর্তনের রূপকার। তারা বিভিন্নভাবে সামাজিক উন্নয়নে কাজ করছেন। কিন্তু বৃহৎ পরিসরে এসডিজি অর্জনের জন্য তরুণদের সম্পৃক্ত করতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ অসাধারণভাবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে। এই প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রাখার জন্য একইসঙ্গে শান্তিু প্রতিষ্ঠা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, তরুণরা অদম্য, সৃজনশীল, উৎপাদনশীল। পরনির্ভরশীলতার মানসিকতা দ্বারা তারা আক্রান্ত নয়। দেশে তরুণদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় বাংলাদেশের সামনে এক অপূর্ব সম্ভাবনা কাজ করছে। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে। আমি মনে করি, দেশের অগ্রযাত্রায় তরুণদের কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশকে রুখবে কে? তরুণদের সম্পৃক্ত করেই আমরা একটি আÍনির্ভরশীল বাংলাদেশ গড়তে চাই।

উপস্থিত তরুণদের উদ্দেশ্যে সুদীপ্ত মুখার্জি বলেন, ভবিষ্যতের নয়, আমি আপনাদেরকে বর্তমানের নেতা হিসেবে দেখতে চাই। তিনি বলেন, শুধু প্রবৃদ্ধি অর্জনই এসডিজি অর্জনের জন্য যথেষ্ট নয়। কারণ সহানুভূতি, সংহতি এবং সম্প্রীতি ছাড়া টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা যাবে না। আমাদের অনেক বেশি বিজ্ঞানী এবং ডক্টর দরকার। কিন্তু একইসঙ্গে আমাদের অনেক বেশি ভালো মানুষ দরকার। আপনারা জানেন, এসডিজিতে মানসম্মত শিক্ষার কথা বলা হয়েছে। এর কারণ হলো মানসম্মত শিক্ষা মানুষকে ভালোবাসতে শেখায়।

এসডিজি সম্পর্কে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, দান-অনুদানের পরিবর্তে এসডিজিতে উন্নয়নকে অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এসডিজির মূল প্রতিপাদ্যই হলো কাউকে পেছনে রাখা যাবে না। এসডিজির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হলো মানসম্মত শিক্ষা। কারণ মানসম্মত শিক্ষার মাধ্যমেই কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা যায়। উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার জন্য একইসঙ্গে নিরাপত্তা ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দরকার হবে।

জনাব আসিফ সালেহ বলেন, এখন তরুণদের সময়। সারা পৃথিবীতেই আজ তরুণ নেতৃত্ব পরিলক্ষিত হচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের দেশে এখন ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড রয়েছে। ২০৩৩ সালে এটা শেষ হয়ে যাবে। তাই এই সময়টাকে কাজে লাগাতে হবে, তরুণদের দক্ষ ও যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে এবং উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে যুক্ত করতে হবে। তরুণদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আজকের পৃথিবীর অর্থনীতি নলেজ ইকোনমিতে পরিণত হয়েছে। তাই নিজের উদ্যোগে প্রতিনিয়ত শিখতে হবে। নানান বাধা আসবে, কিন্তু হার মানা যাবে না। ব্যর্থতা আসবে, কিন্তু ব্যর্থতা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। আরেকটি বিষয় হলো ভালো কাজে নতুনদের যুক্ত করতে হবে, অর্থাৎ দল বাড়াতে হবে।