কঠোর পরিশ্রম করে এবং নিজের আত্মশক্তিকে কাজে লাগিয়ে সফলতার মত সোনার হরিণকে হাতের মুঠোয় এনেছেন উজ্জীবক শ্রী প্রভাস চন্দ্র মহন্ত। প্রভাস চন্দ্র রংপুর সদর উপজেলার উত্তর খলেয়া মধ্যপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। ২০১২ সালে তিনি দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর উজ্জীবক প্রশিক্ষণ (১,৮৯২ তম ব্যাচ) এবং এর কিছু সময় পর গণগবেষণা কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ দুটি তার জানার পরিধি বাড়িয়ে দেয় এবং তাকে উদ্দীপ্ত করে তোলে।
প্রভাস চন্দ্র উজ্জীবক প্রশিক্ষণ নেয়ার আগ থেকেই স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সহকারী সচিব পদে কর্মরত ছিলেন। তারও আগে ২০০৭ সালে তিনি ২৫ জন সদস্য নিয়ে ‘অরণ্য সমবায় সমিতি’ নামে একটি সমিতি গড়ে তোলেন। প্রভাস চন্দ্র উজ্জীবক প্রশিক্ষণ থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান সমিতির উন্নয়নে ব্যবহার করেন।
প্রভাস চন্দ্র তার সমিতির সদস্যদের দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর বিভিন্ন প্রশিক্ষণ যেমন, মৎস্য চাষ প্রশিক্ষণে পাঠানোর ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেন। সমিতির মূলধনের অর্ধেক টাকা মৎস্য খামারে বিনিয়োগ করা হয়। অবশিষ্ট টাকা দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সরকারি জমি লিজ নিয়ে স্থানীয় সড়কে প্রায় ৭ হাজার চারাগাছ রোপণ করেন। তবে স্থানীয় অপরাজনীতির রোষানলে পড়ে ছোট ছোট গাছগুলো বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন তিনি। গাছ বিক্রির পর সমিতির মূলধন দাঁড়ায় ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
প্রভাস চন্দ্র জানান, সমিতির সদস্যদের উদ্যোগে ঝরে পড়া শিশুদের বিদ্যালয়গামী করাসহ মেধাবী শিক্ষার্থীদের বাৎসরিক বৃত্তি দেয়া হয়। সমিতির সদস্যরা ইতিমধ্যে তিনটি বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করেছেন। তাদের প্রচেষ্টার কারণে উত্তর খলেয়া মধ্যপাড়া গ্রামকে বাল্যবিবাহমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
সমিতির উদ্যোগে নারীদের বাড়ির আঙ্গিনায় সবজি চাষে অনুপ্রাণিত করা হয়। সমিতির সদস্যরা বাজার থেকে বীজ সংগ্রহ না করে সমিতির উদ্যোগেই বীজ সংগ্রহ করেন। এর মাধ্যমে তারা ভাল বীজ সংগ্রহ করতে পারছেন এবং কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছেন।
প্রভাস চন্দ্র বলেন, ‘আমাদের সফলতার কারণে এলাকার ছোট ছোট সংগঠনগুলো ‘অরণ্য সমবায় সমিতি’র আওতায় চলে এসেছে। বর্তমানে বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা আমাদের কাছে পরামর্শ চাইতে আসেন। তারা সমিতির মূলধন সুদে না খাটিয়ে কীভাবে নিজেদের উন্নয়নে বিনিয়োগ করতে পারেন সে বিষয়ে পরামর্শ চান এবং তারা সুদের যাঁতাকল থেকে মুক্ত হতে চান।’
সমিতি পরিচালনায় সফলতার পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবে আত্মনির্ভরশীল একজন মানুষ প্রভাস চন্দ্র। উজ্জীবক প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর তিনি নিজেকে আত্মনির্ভরশীল করে তোলার লক্ষ্যে ব্যবসায় মনোনিবেশ করেন। গড়ে তোলেন ‘সন্দীপ রকমারি বিপনী অ্যান্ড স্টেশনারী’ দোকান। বর্তমানে এ দোকান থেকে তার মাসিক আনুমানিক আয় হয় চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা।
প্রভাস চন্দ্র-এর ভবিষ্যৎ স্বপ্ন, ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে সদস্য পদে প্রার্থী হওয়া এবং বিজয়ী হয়ে নিজ ওয়ার্ডের সকল মানুষকে উজ্জীবিত, অনুপ্রাণিত ও আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলা। সংকলণে: শাহ আলম সবুজ, সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার, দি হাঙ্গার প্রজেক্ট।