গৃহবধূ থেকে সালমা এখন নেত্রী

তিনি কোনো নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নন। কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনের সাফল্য, মানুষের সেবা ও অসাধারণ কর্মদক্ষতার কারণে এলাকার মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন নেত্রী হিসেবে। অদম্য এই নেত্রীর নাম সালমা খাতুন। তিনি মনে করেন, দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর প্রশিক্ষণই তাকে এই পর্যায়ে আসতে সহায়তা করেছে। সালমা সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার মৌতলা ইউনিয়নের বাসিন্দা। পারিবারিক রক্ষণশীলতার কারণে এসএসসি পাশের পর আর লেখাপড়া করা হয়নি তার। বিয়ের পর চলে আসেন স্বামীর সংসারে। একে এক সালমার কোলজুড়ে আসে দু কন্যা ও এক পুত্র। স্বামী আসাদুজ্জামান ব্যবসা করতে গিয়ে লোকসানের মুখে পড়েন। সংসারের আয় বাড়াতে একটি উপায় খুঁজতে থাকেন সালমা। এ রকম একটি অবস্থায় তিনি দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর উজ্জীবক প্রশিক্ষণ (২,০১৩তম ব্যাচ) এবং ‘নারী নেতৃত্ব বিকাশ’ শীর্ষক বুনিয়াদি প্রশিক্ষণে (১৪০তম ব্যাচ) অংশ নেন। প্রশিক্ষণগুলো তাকে উদ্দীপ্ত করে এবং আত্মকর্মসংস্থান তৈরির জন্য অনুপ্রেরণা যোগায়। স্থানীয় একটি এনজিও থেকে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে তিনি একটি মুরগির খামার গড়ে তোলেন। এর পাশাপাশি সালমা বসতবাড়ির পাশে পাঁচ শতক জমিতে পুইশাক এবং বাড়ি সংলগ্ন ছোট পুকুরে দেশীয় প্রজাতির কিছু মাছ চাষ করেন। সময়ের ব্যবধানে সালমা মুক্তি পান দারিদ্র্যের অভিশাপ থেকে।

তিনি নিজ উদ্যোগে ধাত্রী প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এছাড়া তিনি স্থানীয় কমিউনিটি সাপোর্ট গ্রুপের নারীনেত্রী। এলাকার যে কোনো দুর্ঘটনা, অসুখ-বিসুখ, সন্তান প্রসব বা অন্য কোনো কারণে মানুষ বিপদে পড়লে সবার আগে পৌঁছে যান সালমা। প্রসূতি মা ও শিশুদের স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ে স্ব-উদ্যোগে সচেতন করেন সবাইকে। নারী শিক্ষার গুরুত্ব বোঝাতে সুযোগ পেলেই চলে যান বিভিন্ন উঠান বৈঠকে। তার উদ্যোগেই শিশুবিবাহের অভিশাপ থেকে রক্ষা পেয়েছে মুক্তি, চুমকি, নুর নাহার-সহ অনেকে, যাদের মধ্যে নুর নাহার এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। সমাজ উন্নয়নমূলক এসব কাজের মাধ্যমে সামান্য গৃহবধূ থেকে মানুষের হৃদয়ের নেত্রী হয়ে উঠেছেন সালমা খাতুন।