এসডিজি ইউনিয়ন গড়ে তোলা

২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৯৩টি দেশের রাষ্ট্র/সরকার প্রধানেরা ‘ট্রান্সফরমিং আওয়ার ওয়ার্ল্ড: দ্যা ২০৩০ এজেন্ডা ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট’ শিরোনামের একটি কর্মসূচি অনুমোদন করে, যা সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস (এসডিজি) নামে পরিচিত। বিশ্বমানবতার সমৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে এটি একটি কর্মপরিকল্পনা, যা বিশ্বব্যাপী শান্তি, সমৃদ্ধি ও কার্যকর অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠিত করবে। বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রত্যাশা, ২০৩০ এজেন্ডা তথা এসডিজি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পাবে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ এবং অর্জিত হবে পরিবেশের ভারসাম্য।

দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ‘এসডিজি ইউনিয়ন’ গড়ার লক্ষ্যে সরকার, জনগণ ও স্থানীয় পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি মিলে ত্রি-পক্ষীয় পার্টনারশিপ বা অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে আসছে। কর্মসূচির অংশ হিসেবে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও সদস্যদের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে তাদের অংশগ্রহণে বিশেষ উজ্জীবক প্রশিক্ষণ, ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ স্বেচ্ছাসেবক সৃষ্টির জন্য ‘উজ্জীবক প্রশিক্ষণ’, নারীর ক্ষমতায়ন ও নেতৃত্বের বিকাশ ঘটাতে ‘নারী নেতৃত্ব বিকাশ’ শীর্ষক ফাউন্ডেশন প্রশিক্ষণ এবং সমাজের প্রতি তরুণদের দায়বদ্ধতার মানসিকতা সৃষ্টিতে ‘ইয়ূথ লিডারশিপ প্রশিক্ষণ’ প্রদান করা হয়। এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য হলো– ইউনিয়ন পরিষদের নেতৃত্বে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষকে, বিশেষত দরিদ্র-অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠীকে উদ্বুদ্ধ ও সংগঠিত করে এসডিজি’র লক্ষ্যগুলো অর্জন করা। স্বেচ্ছাব্রতী উজ্জীবক, নারীনেত্রী ও ছাত্র-ছাত্রীরা জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার ক্ষেত্রে অনুঘটকের ভূমিকা পালন করছে।

দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর পক্ষ থেকে জনঅংশগ্রহণে ওয়ার্ডসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের উন্মুক্ত বাজেট অধিবেশন আয়োজনে সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদের কাজের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করার জন্য জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় নাগরিকদের সম্মিলনে স্থায়ী কমিটিগুলো কাজ করছে। পরিষদ এবং উজ্জীবকদের প্রচেষ্টায় ছাত্র-ছাত্রীদের বিদ্যালয়মুখী করা এবং বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ পরিচালনা করা হচ্ছে। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, যৌতুকমুক্ত বিবাহ সম্পন্ন এবং বিবাহ নিবন্ধন এ পরিষদের সাথে উজ্জীবকরা নিবেদিতভাবে কাজ করছে। বিভিন্ন ইউনিয়নে উজ্জীবকদের অনুপ্রেরণায় স্বল্পবিত্তের জনগণকে নিয়ে সারাদেশে দুই হাজারের অধিক স্থানীয় সংগঠন গড়ে উঠেছে, যার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার সঞ্চয় সৃষ্টি হয়েছে।

দি হাঙ্গার প্রজেক্ট মনে করে, ২০৩০ এজেন্ডা বা এসডিজি’র লক্ষ্য ও টার্গেটের অবিভাজ্যতা, পারস্পরিক সম্পৃক্ততা ও সংযুক্ততার গুরুত্ব সুদূরপ্রসারী ও তাৎপর্যপূর্ণ, বিশেষত এর বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে। অর্থাৎ, এগুলো আংশিক বা বিচ্ছিন্নভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। শুধু শিক্ষা, স্বাস্থ্য প্রভৃতির ওপর প্রকল্প/কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে এসডিজি অর্জন করা যাবে না, এর জন্য আরও প্রয়োজন হবে শান্তি প্রতিষ্ঠা, রাষ্ট্র গঠন, মানবাধিকার বাস্তবায়ন ও সুশাসন কায়েম করার মতো ইস্যুগুলোর প্রতি মনোনিবেশ। এর জন্য অবশ্য প্রয়োজন একধরনের হলিস্টিক, ঊর্ধ্বমুখী ও সুসংহত ‘কমিউনিটি-লেড ডেভেলপমেন্ট’ অ্যাপ্রোচ, যার উদ্দেশ্য হবে উন্নয়নের জন্য সামাজিক পরিবর্তন, অনুন্নয়নের আংশিক প্রতিকার নয়। এর জন্য প্রয়োজন হবে সমাজে নারী, পুরুষ ও তরুণদের তাঁদের জীবনের হাল ধরার সুযোগ সৃষ্টি করা। এই প্রক্রিয়ার জন্য আরও প্রয়োজন হবে নাগরিকদের পরিবর্তনের রূপকার হিসেবে সক্রিয়করণ; তৃণমূল সংগঠনের মাধ্যমে সাধারণ জনগণের কণ্ঠকে উচ্চকিত করার সুযোগ প্রদান; গতিশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতি সৃষ্টি এবং অনুঘটকের ভূমিকা পালনকারী একটি কার্যকর ও দায়বদ্ধ স্থানীয় সরকারব্যবস্থা।

প্রসঙ্গত, এমডিজি ইউনিয়ন গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও দি হাঙ্গার প্রজেক্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দি হাঙ্গার প্রজেক্ট তার কর্মপ্রচেষ্টার ফলে যেসব ইউনিয়ন গণকেন্দ্রিক উন্নয়নের দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেতে পেরেছে এমন কয়েকটি ইউনিয়ন হলো– বাগেরহাটের বেতাগা; খুলনার বটিয়াঘাটা; মেহেরপুরের ধানখোলা, মটমুড়া; রাজশাহীর ধূরইল, মৌগাছি, নওগাঁর আমাইড়, পাটিচরা; রংপুরের গজঘন্টা, কোলকোন্দ, নোহালী; টাঙ্গাইলের হেমনগর, অলোয়া; ময়মনসিংহের চর ইশ্বরদিয়া; সিলেটের আমতৈল, কালাপুর; কুমিল্লার আজগরা; বরিশালের রাজিহার, আগৈলঝরা; মুন্সীগঞ্জের পঞ্চসার ও মানিকগঞ্জের দিঘী ইউনিয়ন ইত্যাদি।