উজ্জীবক অপূর্ব মল্লিক-এর দিনবদলের গল্প

মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মভিটা খ্যাত যশোর জেলা। এই জেলার মনিরামপুর উপজেলার দূর্বাডাঙ্গা ইউনিয়নের বাসিন্দা অপূর্ব মল্লিক। এসএসসি পাশের পর কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু পরে আর লেখাপড়া করা হয়নি তার। বন্ধুদের সাথে আড্ডা আর বাবার কাজে সামান্য হাত লাগানো–এসব করেই দিন কাটতো তার। এভাবে চলতে চলতে ২০১৩ সালে অপূর্ব দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর উজ্জীবক প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণের ব্যানারে লেখা ‘আত্মশক্তিতে বলীয়ান ব্যক্তি কখনোও দরিদ্র থাকতে পারে না’– এ কথাটি তাকে অনুপ্রাণিত করে। প্রশিক্ষণ থেকে অপূর্ব জানতে পারেন, নিজের পরিবর্তনের পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে সমাজের মানুষের জন্য তার অনেক কিছু করার আছে। প্রশিক্ষণ শেষে ফিরে এসে তিনি একটি মাছের ঘের গড়ে তোলেন। বর্তমানে মাছের ঘের থেকে বছরে তিনি প্রায় দেড় লাখ টাকা আয় করেন।

মাছ চাষ ছাড়াও অপূর্ব ২০১৪ সালে দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর উদ্যোগে আয়োজিত কেঁচো কম্পোস্ট সার উৎপাদন বিষয়ক এক প্রশিক্ষণে অংশ নেন। প্রশিক্ষণের পর থেকে তিনি এই সার উৎপাদন করা শুরু করেন। বর্তমানে তার কেঁচো সার তৈরির চারটি প্ল্যান্ট আছে। তিনি নিজের জমিতে এ সার ব্যবহার করেন। এরফলে তার চাষাবাদ খরচ যেমন কমেছে, তেমনি পরিবেশের ভারসাম্যও রক্ষা হচ্ছে।

এসব কাজের পাশাপাশি অপূর্ব এলাকার সমমনা মানুষদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন ‘শাপলা গণগবেষণা সমিতি’, যেখানে ২০ জন সদস্য প্রতিমাসে ৫০ টাকা করে সঞ্চয় করেন। বর্তমানে সমিতির সঞ্চয় ৫০ হাজার টাকার বেশি। সমিতির সদস্যদেরকে এখন আর চড়া সুদে ঋণ নিতে হয় না। কারণ তারা সহজ শর্তেই সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে বিভিন্ন আয়মুখী কাজের সাথে যুক্ত হতে পারছেন।

অপূর্ব মল্লিক মনে করেন, সফলতা এমনি এমনি এসে ধরা দেয় না, বরং আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়ে এবং পরিশ্রম করে তা আদায় করে নিতে হয়। দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর উজ্জীবক প্রশিক্ষণ থেকে এই শিক্ষাই পেয়েছেন বলে জানান অপূর্ব মল্লিক।