আমাদের নীতিমালা

ক্ষুধামুক্তির কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে দি হাঙ্গার প্রজেক্ট দশটি নীতিকে ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করেছে। দি হাঙ্গার প্রজেক্ট তার সকল কৌশলগত কার্যক্রম এই নীতিগুলোর ওপর ভিত্তি করেই তৈরি করে। নিম্নে দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর দশটি নীতিমালা তুলে ধরা হলো:

১। মানবিক মর্যাদা:
প্রতিটি মানুষ তার জন্মের সময় খাদ্য,স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কাজের অধিকারসহ সম-মর্যাদা ও সম-অধিকার নিয়েই জন্মগ্রহণ করে। প্রত্যেক মানুষ প্রকৃতিগতভাবেই সৃজনশীল, কর্মময়, আত্মনির্ভরশীল, উৎপাদনশীল এবং দায়িত্বশীল। মানুষের সাথে ক্ষুধা-দারিদ্র্যের সুবিধাভোগী হিসেবে আচরণ করা অবশ্যই ঠিক নয়, যা তাদের মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করে। বরং তারা ক্ষুধামুক্তির চাবিকাঠি।

২। নারী-পুরুষের সমতা:
সমাজে নারী-পুরুষের সমতা অর্জন করা ক্ষুধা-দারিদ্র্য অবসান করার অন্যতম অংশ। নারীরা মৌলিক চাহিদা পূরণের প্রধান দায়িত্ব বহন করা সত্ত্বেও পদ্ধতিগতভাবে তাদেরকে সম্পদ, স্বাধীনতা ও সিদ্ধান্ত- গ্রহণ করা থেকে বিরত রাখা হচ্ছে।

৩। ক্ষমতায়ন:
সামাজিক বাধাগুলো অতিক্রম করে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার জন্য জনগণকে উদ্বুদ্ধ এবং সংগঠিত করা প্রয়োজন, যাতে করে তারা নিজেদের ও সমাজের উন্নয়নের লক্ষ্যে নিজেরাই দায়িত্ব গ্রহণ করে।

৪। কৌশলগত কার্যক্রম:
বিরাজমান দীর্ঘস্থায়ী ক্ষুধা অবসানের জন্য এমন কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা প্রয়োজন যা পদ্ধতিগতভাবে বৃহদায়তন পরিবর্তনের সূচনা ঘটাবে। সময়ে সময়ে এই কার্যক্রমের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত প্রভাব যাচাই করতে হবে এবং বিরাজমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে উচ্চ প্রভাবযুক্ত কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে।

৫। পারস্পরিক সম্পৃক্ততা:
আমাদের কার্যক্রমগুলোর পরিকল্পনা এমনভাবে সন্নিবেশিত করা হয়েছে যাতে সকল মানুষ ও প্রকৃতির মাঝে সেতুবন্ধন তৈরি করে। ক্ষুধা ও দারিদ্র্য একটি বা দুটি দেশের সমস্যা নয়, এটি গোটা বিশ্বেরই সমস্যা। এই সমস্যা অবশ্যই ‘দাতা-গ্রহীতা’ সম্পর্কের মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব নয়, বরং বৈশ্বিক নাগরিক হিসেবে সম-সহযোগিতার ভিত্তিতে ক্ষুধা-দারিদ্র্য অবসানের লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।

৬। স্থায়ীত্বশীলতা:
ক্ষুধা অবসানের কার্যক্রম অবশ্যই স্থানীয়ভাবে, সামাজিকভাবে, অর্থনৈতিকভাবে ও পরিবেশগতভাবে সমাধান হতে হবে।

৭। সামাজিক রূপান্তর:
জনগণের আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনের কার্যক্রমগুলো দুর্নীতি, সশস্ত্র সংঘাত, বর্ণবিদ্বেষ ও নারীর প্রতি সহিংসতার মত ঘটনার কারণে চাপা পড়ে যায়। এই ঘটনাগুলো অতি পুরাতন–পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতারই ফসল। পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতার রূপান্তর অবশ্যই ঘটাতে হবে। এই রূপান্তরই হবে সংগঠিত সমাজ গড়ে তোলার ভিত্তিপ্রস্তর।

৮। সামগ্রিক পদ্ধতি:
ক্ষুধা-দারিদ্র্য দূরীকরণের কার্যক্রমের সাথে যথোপযুক্ত কাজ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবেশের ভারসাম্যতা, সামাজিক সুষ্ঠু বিচার ইত্যাদি অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত। এই বিষয়গুলো অর্জনের লক্ষ্যে সামগ্রিকভাবে একত্রে সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হলে এর যে কোনো একটি টেকসইভাবে দূর হবে।

৯। বিকেন্দ্রীকরণ:
স্থানীয় উন্নয়নের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত ও স্থানীয় সমষ্টিগত উদ্যোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্থানীয় জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করে কোনো কার্যক্রমের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলে তা অধিকাংশ ক্ষেত্রে সফল হয়। এর জন্য প্রয়োজন জনগণের সাথে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করার মানসিকতাসম্পন্ন কার্যকর জাতীয় ও স্থানীয় সরকার।

১০। নেতৃত্ব:
ক্ষুধা-দারিদ্র্য অবসানের জন্য প্রয়োজন নতুন প্রজন্মের নেতৃত্ব। উপর থেকে নিচে, কর্তৃত্বপরায়ণ নেতা নয়, বরং এমন নেতা যিনি জনগণের অন্তর্নিহিত শক্তিকে জাগিয়ে তুলবেন– জনগণের সাথে সম্পৃক্ত ও জনগণের ওপর কর্তৃত্ব স্থাপনকারী নন।